বিদেশে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে জোর প্রচেষ্টা প্রয়োজন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি বাংলাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়া আলোচনা করবো।
২০২৪ সালে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় বেড়েছে—এটা নিশ্চয়ই আমাদের সকলের জন্য আনন্দের কথা। বিশেষ কইরা এদেশে যখন তীব্র ডলার–সংকটের সময়। গত ২০২৩ সালে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। কিন্তু এইটার সঙ্গে বিদেশে কর্মী পাঠানোর যে পরিসংখ্যান সেটা মেলালে আমরা পুরোপুরি হতাশ হই।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদেশে শ্রমিক পাঠানো কমার কারণ বড় আকারের তিনটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া। বাজারগুলো হলো মালয়েশিয়া, ওমান আর সংযুক্ত আরব আমিরাত। এখন অবশ্য সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানোর সংখ্যা বাড়তেছে। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার কর্মী। পরের বছর এই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখের বেশি। ২০২৩ সালে তা আরও ২ লাখ বেড়ে কর্মী সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। যদিও গত বছর তা ৩ লাখ কমে দাঁড়ায় ১০ লাখে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কর্মী গেছেন মাত্র ৫টি দেশে। এগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য যেসব দেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে, ওইসব দেশ কিন্তু কর্মী নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করেনি। জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম–দুর্নীতির কারণেই ওই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তবে চক্র গঠনের অভিযোগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সব দেশের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে প্রবাসী আয় বাড়ার অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতেও এটা অব্যাহত থাকবে। প্রতিবছরই আগে পাঠানো শ্রমিকদের একটা অংশ দেশে ফিরে চলে আসে। ফলে ফেরত আসাদের শূন্যস্থান পূরণ না করা গেলে প্রবাসী আয়ও অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
তিনটি বড় দেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সৌদি আরবই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা। ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ায় সৌদি আরবে অবকাঠামো নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে আশা করা যায়। এ সুযোগ কাজে লাগানোর পাশাপাশি ওমান, মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতের বাজার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।
অনেকদিন ধরে বিদেশে শ্রমবাজার বহুমুখী করার আওয়াজ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নতুন বাজার খোঁজার তেমন উদ্যোগও লক্ষ করা যাচ্ছে না। যাঁদের কারণে শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর মাধ্যমে হারানো শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করতে হবে। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করবে না।
পাশাপাশি যারা ইতিমধ্যে বিদেশে আছেন, তারাও সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রচেষ্ঠা নিলে দেশের ভাবমূর্তি বাড়বে এবং অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বাড়বে আশা করি।
আপনারা নিজেদের লেখা প্রকাশ করার জন্য সরাসরি যোগাযোগ ফর্ম কিংবা ই-মেইল এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।